কক্সবাজার, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

ইন্দোনেশিয়ায় কুকুরের মাংস বিক্রি বাড়ছে

 

সরকারি চাকরিজীবী সিলাস সিহমবিংয়ের জন্য কুকুরের মাংস খাওয়ার সুযোগ পাওয়া ততটা সহজ বিষয় নয়; তবে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের মেদানের একটি রেস্টুরেন্টে এই মাংস সহজেই পেয়ে গেলেন তিনি।

মেদানের লু ডিম্বো সিমালেম রেস্টুরেন্টে কুকুরের মাংস খেতে খেতে তিনি বলছিলেন, ‘আজ আমি এই মাংস খাচ্ছি, খুব ক্ষুধা লেগেছে। খাবারটা অত্যন্ত সুস্বাদু।’

সিলাসের মতো আরও অনেকেই মেদানে কুকুরের মাংস ভীষণ পছন্দ করেন। ওই এলাকাজুড়ে পাওয়া যায় এই মাংসের অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। তবে বেশি কুকুরের মাংস খেয়ে থাকেন বাতাক নামের আদিবাসী গোষ্ঠী। স্বাদ ও পুষ্টিগুণের জন্য এই মাংস বেশি পছন্দ তাদের।

কুকুরের মাংস বিক্রির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী সংগঠন ‘কুকুরের মাংসমুক্ত ইন্দোনেশিয়া’র তথ্যমতে, দেশটির প্রায় ৭ ভাগ নাগরিক এখন কুকুরের মাংস খেয়ে থাকেন।

২৭ কোটির জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ৮৭ ভাগ মানুষ মুসলমান। মুসলমানদের জন্য কুকুরের মাংস হারাম ও নিষিদ্ধ। দেশটির ৯ শতাংশ নাগরিক খ্রিস্টান, যারা এ মাংস খেতে কোনো বিধিনিষেধের আওতায় পড়েন না।

আল জাজিরা বলছে, ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রা, উত্তর সুলাওয়েসি এবং পূর্ব নুসা টেঙ্গারার মতো খ্রিস্টান প্রধান এলাকাগুলো যেখানে জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ মুসলিম, সেখানে কুকুরের মাংস খাওয়ার প্রবণতা বেশি।

এমন প্রেক্ষাপটে কুকুরের মাংস বিক্রির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আছে দেশটির বেশকিছু পশু অধিকার গোষ্ঠী। তারা বলেছে, কুকুর খাওয়ার ব্যাপারটি আসলে নিষ্ঠুরতা প্রচার করে। একই সঙ্গে এই মাংস জলাতঙ্কের প্রাদুর্ভাবের মতো জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে।

তবে অনেক নাগরিক এর বিপক্ষে মত দিয়ে বলেছেন, কুকুরের মাংস মুরগির মাংস বা গরুর মাংস খাওয়ার মতোই। এটি আলাদা কিছু নয়। কুকুরের মাংস নিষিদ্ধ করলে তো এসব মাংসও নিষিদ্ধ করতে হয়।

দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ নুসা টেঙ্গারার মোলোর লেখক এবং খাদ্য অধিকার কর্মী ডিকি সেন্ডা বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রদেশে কুকুরের মাংসের ব্যবসা বেড়েছে।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, এ এলাকায় ঐতিহ্যগতভাবে কুকুরের মাংস খাওয়ার রীতি ছিল না। আমাদের সংস্কৃতিতে এই প্রাণী খুব গুরুত্ব বহন করে। কুকুরকে বন্ধু ও আত্মীয়ের মতো ভাবা হয়। তবে কখন এই মাংস খাওয়া শুরু হলো তা জানি না। কুকুরের মাংস এখন এখানে খুব জনপ্রিয়।

চাহিদার তুলনায় মাংস সরবারহ করা রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন নুসা টেঙ্গারা এলাকার কুকুরের মাংস ব্যবসায়ীরা। এ প্রেক্ষাপটে অসাধু অনেক ব্যবসায়ী রাস্তায় পটাসিয়ামযুক্ত খাবার দিয়ে এই প্রাণীকে অচেতন করে ধরে তার মাংস বিক্রি করছেন।

কুকুরের মাংস বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে এই প্রাণী রক্ষায় আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো। এ মাংস বিক্রি নিষিদ্ধের দাবি করে আসছে এসব সংগঠন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে অনেক স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ কুকুরের মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

কুকরের মাংস বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকায় গত বছর প্রথম বারের মতো এক ব্যবসায়ীকে ১০ মাসের কারাদণ্ড দেয় জাভার একটি আদালত। তার ট্রাক থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ৭০টিরও বেশি প্যাকেটজাত কুকুরের মাংস।

মেদানের মেয়র গত ৬ জুলাই উন্মুক্তভাবে কুকুরের মাংস বিক্রি বন্ধে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তবে এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে, মেয়রের মুখপাত্র বলেন, নিষেধাজ্ঞা নয়, কুকরের মাংস না খেতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

পাঠকের মতামত: